আব্দুল কাইয়ুম
আমার বয়স যখন ছয়, আব্বু আমাকে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি করে দিল। তার দুই বছর পর আম্মুও ভর্তি হলো একটা গার্লস স্কুলে। আমার স্কুল আর আম্মুর স্কুল পাশাপাশি ছিল। আমি আম্মুর সঙ্গে প্রায়ই স্কুলে যেতাম। মজার ব্যাপার হলো, আম্মুর সঙ্গে স্কুলে যাওয়া আর মজা করে ফুচকা খাওয়া। আম্মু নবম শ্রেণীতে ভর্তি হয়। আম্মু প্রতিদিন স্কুলে যেতে পারত না, কারণ আমার যে দাদি ছিলেন, তাঁর দেখাশোনা করতে হতো। আমার দাদির মানসিক সমস্যা ছিল। সারা দিন বাড়ির গেট ঝাঁকাতেন বাইরে যাওয়ার জন্য। তিনি বাইরে গেলে হারিয়ে যেতেন, এই জন্য তাঁকে বাইরে যেতে দেওয়া হতো না। আমার ফুপাতো বোন ছিল, সে তিন দিন দেখত আর আম্মু তিন দিন দেখত—এভাবে স্কুল করত।
আমার সঙ্গে আম্মুর দুই দিন করে দেখা হতো স্কুল ছুটির সময়। আম্মু তার বান্ধবীদের সঙ্গে আসত। আমিও তাদের সঙ্গে যোগ দিতাম। স্কুলের কাছেই আব্বুর কসমেটিকসের দোকান ছিল। আমি আর আম্মু প্রায়ই আব্বুর দোকানে গিয়ে টাকা নিতাম আর ফুচকার দোকানে গিয়ে ফুচকা খেতাম। অনেক দিন দুজনে হাত ধরাধরি করে যেতাম রাস্তা দিয়ে। একদিন স্কুল ছুটির পর আম্মু তার সঙ্গীদের সঙ্গে আসছে। আমিও তাদের সঙ্গে যোগ দিলাম। আম্মুর হাতে আলুর চপ ছিল, সবাই খাচ্ছে, আমিও সেখান থেকে নিলাম। আম্মুর এক বান্ধবী বলল, এটা তোর কে? আম্মু বলল, এটা আমার ছেলে। শুনে সবাই অবাক! বিস্ময়ে ওদের আলুর চপ চিবানো বন্ধ হয়ে গেল। ওরা বলল, তুই মিথ্যা কথা বলছিস! আম্মু বলল, তাহলে ওই দোকানে চল, তবেই বিশ্বাস হবে। তারপর আম্মু সবাইকে আব্বুর কাছে নিয়ে গেল। ওরা আব্বুকে জিজ্ঞেস করলে আব্বু বলে, হ্যাঁ, ও আমার পরিবার। একজন বলে উঠল, আমার জীবনে এ রকম ঘটনা দেখি নাই, শুনিও নাই যে ছেলে-মা একসঙ্গে চপ খেতে খেতে বাড়ি যায়, আবার স্কুলে লেখাপড়া করে। আরেকটা মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমার আম্মুকে কিন্তু আমি দুই নামে ডাকি, একটা আম্মু আর একটা আম্মা। যখন যেটা খুশি। দাদি মারা গেছেন বছর সাত আগে। আম্মুর সঙ্গে স্কুলে যাবার দিনগুলো মিস্ করি খুব।
আব্দুল কাইয়ুম
সাবস্ক্রাইবার বৃদ্ধি করার পূর্বে সর্বপ্রথম জানতে হবে কেন ইউটিউবে সাবস্ক্রাইবার প্রয়োজন। সাবস্ক্রাইবার হল তারা যারা আপনার কন্টেন্ট পছন্দ করেছে, আপনাকে ফলো করেছে এবং যারা আপনার পরবর্তী কন্টেন্টিও দেখতে চায়। এছাড়া একজন সাবস্ক্রাইবার হল সেই ব্যক্তি যিনি আপনার নতুন ভিডিও দেখে, লাইক দেয় কমেন্ট করে আবার শেয়ারও করে। যার কাছে আপনি পণ্য বা সার্ভিস বিক্রয় করতে পারবেন, যার শেয়ারের মাধ্যমে আপনার ফলোয়ার এবং কাস্টমার বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও যখন কেউ আপনার চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে এবং পরবর্তীতে তার ইউটিউব অ্যাকাউন্ট লগইন করবে তখনই তার ইউটিউব এর হোম পেজে আপনার ভিডিও দেখতে পাবে এতে করে ভিউ বৃদ্ধি পাবে। আর যত বেশি সাবস্ক্রাইবার বৃদ্ধি পাবে তত বেশি ইনকামের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং আমরা সহজেই বুঝতে পারি সাবস্ক্রাইবারের গুরুত্ব কত। তাই ভিডিও মার্কেটিং এর একটি গুরুত্বপূর্ন লক্ষ্য থাকে সাবস্ক্রাইবার বৃদ্ধি করা।
এখন চলুন জানি কিভাবে সাবস্ক্রাইবার বৃদ্ধি করতে হয়?
১. সাবস্ক্রাইব করার জন্য আহ্বান করাঃ
Call To Action ডিজিটাল মার্কেটিং এর জন্য খুবই কার্যকরী। ভিডিও মার্কেটিং এর ক্ষেত্রেও এটি অনেক কার্যকরী। আপনার ভিডিও শেষ হওয়ার পূর্ব মূহুর্তে আপনার ভিউয়ারদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে আহ্বান করুন। এই আহ্বান বা Call To Action আপনার সাবস্ক্রাইবার বৃদ্ধি করবে দ্রুত। তবে এই আহ্বান সঠিক ভাবে উপস্থাপন করতে হবে। ভিডিও তে Call-To-Action ব্যবহারের ক্ষেত্রে ৩টি বিষয় তুলে ধরতে হবেঃ
~ তাদেরকে বলুন কি করতে হবে?
~ তাদেরকে বলুন কেন সাবস্ক্রাইব করা প্রয়োজন ?
~ তাদেরকে বলুন কিভাবে করতে হবে?
যেমনঃ বলতে পারেন আপনি যদি আমার আরও নতুন নতুন টিপস পেতে চান তাহলে এখুনি সাবস্ক্রাইব বাটনে ক্লিক করুন।
২. Annotation ব্যবহার করুনঃ
Annotation হল ছোটএকটি স্টিকি নোট যা মানুষ তার ভিডিওতে ব্যবহার করে। এটি সাবস্ক্রাইবার বা ভিউ দুটোই বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। যদিও কিছু কিছু ভিডিও মার্কেটাররা এটি বেশি রকম ব্যবহার করে যা বিরক্তির কারণ হয়ে দারায়। তাই Annotation এমন ভাবে ব্যবহার করুন যাতে তা ভিউয়ারদের বিরক্ত না করে আপনার সাবস্ক্রাইবার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। Annotation ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আপনি দুই ভাবে ব্যবহার করতে পারেন।
~ ইউটিউবে যে সকল Annotation রয়েছে সে Annotation গুলোতে চ্যানেলের লিঙ্ক ব্যবহার করতে পারেন বা আপনার অন্য ভিডিও এর লিঙ্ক ব্যবহার করতে পারেন ।
~ গ্রাফিক্সের মাধ্যমে কোন একটি বাটন ডিজাইন করে তা ভিডিও এ অন্তরভুক্ত করা এবং সেই বাটনে ইউটিউবের স্পট লাইট Annotation ব্যবহার করা যার সাথে আপনার চ্যানেলের লিঙ্ক যুক্ত থাকবে। এটি ভিউয়ারদের চোখে পড়ে বলে খুব কার্যকর।
৩. ব্লগে ইউটিউব Widget ব্যবহার করাঃ
যদি আপনার কোন ওয়েব প্রোপার্টি থাকে যেখানে অনেক বা ভালো ট্রাফিক আসে সেই প্রোপার্টি আপনার সাবস্ক্রাইবার বৃদ্ধিতে ব্যবহার করতে পারবেন। অর্থাৎ আপনার যদি কোন ব্লগ থাকে সেই ব্লগে এম্বেড করে ভিডিও রাখার মাধ্যমে সাবস্ক্রাইবার বৃদ্ধিতে কাজে লাগাতে পারেন। সে জন্য আপনাকে ব্লগে ইউটিউব সাবস্ক্রাইবার Widget ইন্সটল করতে হবে। Widget টি ইন্সটল করা খুব সহজ।
৪. নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করুনঃ
ইউটিউব হচ্ছে একটি কমিউনিটি। যেখানে একজন আরেকজন এর সাথে সম্পর্ক তৈরি হয়, একজন আরেকজনের সাথে বিভিন্ন লাইক, শেয়ার এবং কমেন্টের মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদান করে।তাই আপনিও আপনার নিশের অন্যান্য ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি কারকদের সাথে যোগাযোগ সম্পর্ক তৈরি করুন। তাদের ভিডিওতে নিয়মিত কমেন্ট করুন, লাইক দিন শেয়ার করুন। এর ফলে আপনার সাথে তার সম্পর্ক তৈরি হবে তার সাবস্ক্রাইবাররা আপনার কমেন্টস পড়ে আকৃষ্ট হবে।
প্রয়োজন হলে একদিন সময় নিয়ে বের করুন আপনার নিশের উপর কোন কোন চ্যনেল রয়েছে। তাদের একটি লিস্ট তৈরি করুন তাদের সাথে যোগাযোগ করুন, তাদের পোষ্টে কমেন্ট করুন। সাবধান কোন রকম স্পমিং কমেন্ট করবেন না। প্রাসঙ্গিক এবং তথ্যমূলক কমেন্ট করুন। তাহলেই সেই ভিডিও মার্কেটার এবং চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবারদের আকৃষ্ট করতে পারবেন।
৫. ধারাবাহিকভাবে ভিডিও দিনঃ
ভিডিও এর ধারাবাহিকতা সাবস্ক্রাইবার বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ভিউয়ারস যখন কোন ভিডিও দেখে লাইক কমেন্ট শেয়ার করে ইউটিউব তখন সেই ভিডিওটি তার ভালো লেগেছে মনে করে নতুন ভিডিও হোম পেজে দেখায়। যার ফলে ভিউরাস প্রথম ভিডিওতে সাবস্ক্রাইব না করলেও নতুন ভিডিও দেখার সময় সাবস্ক্রাইব করার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। তাই একটি ভিডিও প্রকাশের পর দীর্ঘ বিরতি না দিয়ে নির্দিষ্ট সময় পর পর ভিডিও প্রকাশ করা উচিত।
Find me -
twitter - Fundamental Sharif
Linkedin - MD Shahidul Islam Sharif
Yourtube - Fundamental Sharif
ইউটিউবে সাবস্ক্রাইবার এবং ভিউ বৃদ্ধি করার ৫ টি উপায়
Fundamental Sharif
December 11, 2017
পশ্চিমা দর্শনের জনক সক্রেটিসের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে। তিনি বলেছিলেন, আমি একটি জিনিসই জানি। তা হলো, আমি কিছুই জানি না। আপনি যত কাছে থেকে দেখার চেষ্টার করবেন, ততই নতুন কিছু বিষয় উঠে আসবে। এগুলো প্যারাডক্স , আপাতবিরোধী হলেও সত্য। এখানে জেনে নিন এমনই ৭টি প্যারাডক্স যা আপনার মস্তিষ্ক এলোমেলো করে দেবে।
১. এটাকে BARBER PARADOX (RUSSELL'S PARADOX) বলা হয়। আমেরিকান গণিতবিদ Bertrand Russell এটা তৈরি করেছেন। একটা গ্রামে একজন নাপিত বাস করে। ক. সে তাদের দাঁড়ি কামায় যারা নিজেদের দাঁড়ি নিজেরা কামায় না। খ. যারা নিজেরা নিজেদের দাঁড়ি কামায় তাদের দাঁড়ি সেই নাপিত কামিয়ে দেয় না।
এখন প্রশ হলো নাপিতের দাঁড়ি কে কামায়? সে নিজে না অন্যকেউ? অন্যকেউ কামালে ক নং বাক্যের সাথে আর নিজে কামালে খ নং বাক্যের সাথে সংঘর্ষ হয়। একটু মন দিয়ে ভাবলেই বুঝতে পারবেন।
২. একটা কাগজে পরপর দুইটি লাইন আছে এরকম: "পরের লাইনটি মিথ্যা। প্রথম লাইনটি সত্যি নয়।" এটাকে বলা হয় ডাবল লায়ার প্যারাডক্স। এতোক্ষণে হয়তো বুঝে গেছেন সক্রেটিসের প্যারাডক্সটি একটি ডাবল লায়ার প্যারাডক্স।
৩. এবার পিচ্ছি একটা প্যারাডক্সের উদাহরণ দিই। এটা লায়ার প্যারাডক্স।
ধরুন, আমি আপনাকে বললাম, "I am a liar." এখন আপনি কি আমার কথাটা বিশ্বাস করবেন নাকি করবেন না?
৪. রহমান সাহেবের ছেলে কিডন্যাপড হয়েছে। উনি চিন্তিত হয়ে বসে আছেন। এমন সময় টেলিফোন বেজে উঠলো।
: রহমান সাহেব?
: বলছি। আপনি কে?
: আপনার ছেলে আমাদের কাছে।
: প্লিজ, তাকে ছেড়ে দিন। যা চান তা দিব।
: আপনার ছেলেকে ছেড়ে দিবো যদি আপনি সঠিকভাবে বলতে পারেন আপনার ছেলেকে আমরা ছেড়ে দিবো নাকি দিবো না।
রহমান সাহেব বললেন," আপনারা আমার ছেলেকে ছেড়ে দিবেন না।" এখন কথা হলো তারা তাঁর ছেলেকে ছেড়ে দিবে নাকি দিবে না? প্যারাডক্সটা বুঝতে হলে একটু মাথা ঘামাতে হবে।
রহমান সাহেব বলেছেন ছেড়ে দিবে না।
কিন্তু কিডন্যাপার বলেছে সঠিকভাবে বলতে পারলে ছেলেকে ছেড়ে দিবে। কিন্তু ছেড়ে দিলে আবার রহমান সাহেবের কথাটা সঠিক থাকে না। আর ছেড়ে না দিলে রহমান সাহেবের কথা সঠিক হয়। এক্ষেত্রে কিডন্যাপার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সঠিক হলে ছেড়ে দিবে। কিন্তু ছেড়ে দিলে আবার সঠিক না হওয়ার প্রসঙ্গ চলে আসে।
৫. মনে করুন, আমি একটা কাগজে ইংরেজি হরফে লিখে দিলাম:"I can not write in English."
৬. "সবনিয়মের ব্যতিক্রম আছে"
বাক্যটিও একটা প্যারাডক্স। নিয়ম করে ব্যতিক্রম হওয়াটাও একটা নিয়ম।
৭. এই উদাহরণটি দুই নং এ বলা ডাবল লায়ার প্যারাডক্স।
"তুমি যা জানো আমি তার সবটা জানি। এবং আমি যা জানি না তা তুমি জানো।"
এটা আমার বানানো। লেখাটা পড়ে আপনিও এধরণের ছোটখাট প্যারাডক্স বানাতে পারবেন।
উপরের উদাহরণগুলো থেকে আশাকরি বুঝতে পারছেন যে প্যারাডক্স হলো এমন এক বা একাধিক বাক্য বা ঘটনা যা পরস্পরের কন্ট্রাডিকশনারি। একই পরিস্থিতিতে দুটো ঘটনা সম্ভব নয়। আবার বলা যায় আমরা প্রতিনিয়তই প্যারাডক্স এর সম্মুখীন হই , যেমন ধরুন আপনি রাতের বেলা চাঁদ দেখছেন কিন্তু আপনার আমেরিকান বন্ধু সেই মুহূর্তে চাঁদ দেখছে না , দেখছে সূর্য । এক পৃথিবীতে থেকে দুইজন দুই জিনিস দেখছেন । তার মানে একই সময় দুইটি ঘটনা ঘটে থাকে ।
এই বিষয়ে আরো স্পষ্ট হওয়া যায় আইনস্টাইনের সময়ের ব্যাখ্যা শুনে , যেমন একটা বজ্রপাতের শব্দ স্থির ব্যাক্তি যে সময়ে শুনবে সেই একই শব্দ চলন্ত ব্যাক্তি একটু পরে বা আগে শুনবে তার মানে একই সময় দুই ঘটনা ।
Find me -
twitter - Fundamental Sharif
Linkedin - MD Shahidul Islam Sharif
Yourtube - Fundamental Sharif
Paradox – প্যারাডক্স : একটি জটিল বিষয়
Fundamental Sharif
December 11, 2017
মা-বাবা,দাদী,আমি আর আমার ভাই,এই পাঁচ জন সদস্যের সংসার আমাদের।আমরা ভাড়া বাসায় থাকি।আমি রুবামা।বয়স তখন বার।আমার ভাই জিব্রান,ওর বয়স নয়।
বাবা কিছুদিন হল কেমন যেন খারাপ আচরণ করে মার সাথে।আমি বুঝি বাবার পরিবর্তন।
এক বিকেলে মা আর দাদী মিলে বিকেলের জন্য নাস্তা বানাচ্ছেন। এমন সময় দরজায় ঠকঠক শব্দ।এই সময় বাসায় কেউ আসার কথা না।কারন বাবা অফিস থেকে ফিরতে ফিরতে রাত নয়টা- দশটা বেজে যায়। দাদী দরজা খুলতে গেলেন। দরজা খুলে দেখেন বাবা দাড়িয়ে আছে।কিন্তু একা না। সাথে ঘোমটা মাথায় এক মহিলা।
বাবা দাদীকে বল্লেন,”মা তোমার বৌমা।আমি আবার বিয়ে করেছি। ওর নাম রিমঝিম। রিমঝিম যাও,মাকে সালাম কর”।
দাদীর কিছু বলার শক্তি ছিল না। ঐদিন কি জঘন্য বিকেলকে আমরা সরাসরি দেখেছি,শুধুমাত্র সৃষ্টিকর্তা জানেন।
মা সারারাত কেঁদেছেন। সকালে মা বললেন,” রুবামা,তোমার ছোট চাচা আর তোমার মামাকে ফোন করে বাসায় আসতে বল। আমি তাই করলাম। পুরো বাড়ির পরিস্থিতি আমার কলিজায় বারবার সুঁইয়ের মত বিঁধছিল।
সেদিন সন্ধ্যায় ছোট চাচা আর মামা আসলেন। নানীও এসেছেন মামার সাথে। বাবা ওনাদের সামনে আসতে চাইছিলেন না। অন্য ঘরে তার নতুন বউকে নিয়ে চোরের মত বসেছিলেন।
বাসায় যারা এলো সব শুনল। নানি গুংরে গুংরে কাদছিলেন।কারন নানি জানেন ,মেয়েকে সাহায্য করা বা মেয়েকে নিজের কাছে রাখার মত আর্থিক অবস্থা তার নেই। চাচা কিছুই না বলে দাঁত কড়মড় করতে করতে বাবার ঘরে গিয়ে বাবার কলার ধরে মেঝেতে ফেলে মুখ বরাবর ঘুসি মারতে মারতে রক্তাক্ত করে ফেললেন। সবাই চাচাকে আটকাল। বাবার বউ রিমঝিম গলা উঁচিয়ে বলে,”এরা তোমার আত্মীয়? আমি থাকব না এই খুনিদের সাথে।“আমার মনে হচ্ছিল ডাইনীটার চুল ছিড়ে ফেলি।বউয়ের সাপোর্ট পেয়ে বাবা তো গলার জোর বারিয়ে দিলো। চাচাকে বলে,”তুই কে রে আমার বিষয়ে কথা বলার?আমি কয়টা বিয়ে করবো, সেটা আমার ইচ্ছা।এতদিন লুকিয়ে চলতাম, এখন থেকে আর লুকিয়ে থাকব না।“
এভাবেই চলতে থাকল কিছুদিন।বাবা আমাদের দুই ভাই-বোনের সাথেও কথা কমিয়ে দিয়েছেন। ওনাকে বাবা বলতে আমার ঘৃণা বোধ হয়। বাসায় এত ঘটনা ঘটা সত্ত্বেও আমি জিব্রানের তেমন কোন পরিবর্তন দেখি না। মেয়েরা একটু তাড়াতাড়ি বোধসম্পন্ন হয়। আর ছেলেরা একটু দেড়িতে। তাই হয়তো আমি যতটা যন্ত্রণা অনুভব করি, জিব্রান ততটা নয়। বাবার নতুন বিয়ের এর মাঝে দুই সপ্তাহ কেটে গেছে। বাসার তো বিরাট পরিবর্তন এসে গেছে। একই বাড়িতে একজন পুরুষের দুই স্ত্রী বসবাস করে। যা মোটেও শোভনীয় নয়। মা আর রিমঝিম(বাবার নতুন স্ত্রী) কেউ কারো সাথে কথা বলেনা। রিমঝিম ধীরে ধীরে তার রূপ প্রকাশ করতে শুরু করে। অবশ্য বাবাকে বিয়ে করেই তিনি তার চরিত্র এবং আচরণের প্যাকেট উন্মোচন করেছেন। সে নিজের এবং বাবার জন্য আলাদা রান্না করে।মাকে উদ্দেশ্য করে খোঁচাত্বক কথা বলে। মা তো বোবা হয়ে গেছে।কিছুই বলে না। বাবা আমাদের খরচের টাকার পরিমাণ কমিয়ে দিলেন।
একদিন মা সহ্য করতে না পেরে ঐ মহিলাকে(রিমঝিমকে) গিয়ে বল্লেন,”কিরে, পৃথিবীতে কি পুরুষের ঘাটতি ছিল রে?বিয়ের জন্য আমার জামাইকেই পেয়েছিস ? বলেই মা ঐ মহিলার ওপর ঝাঁপিয়ে পরলেন।শুরু হল দুইজনার মারামারি। আমি আর দাদী গিয়ে থামালাম সব। বাবা আসতে না আসতেই বাবার সেই মায়াবিনী বাবাকে সব জানাল।বাবা রাগে মাকে চড় মারল। আমি আর সহ্য করতে পারিনি। চিৎকার করে বললাম ,”তুমি একটা কুকুর। রাস্তায় কুকুর দেখলেও আমার এততা ঘৃণা হয়না, যতটা তোমাকে দেখে হচ্ছে।“ বাবা সুযোগ পেয়ে গেল।আমাকে মনভরে থাপ্পর দিলেন।বললেন ,”তোর খরচ আমি আর দেবনা।“
এসব বিষয়ে আমার দাদী নির্বাক ছিলেন।ছেলেকে বোঝাবার চেষ্টা উনি বহুবার করেছেন।কিন্তু দাদীকে অপমান হতে হয়েছে বারবার।বাবা এমন আচরণ করতেন যেন তিনি কোন স্বর্গের দেবীকে হাতে পেয়েছেন। যার নাম রিমঝিম। স্বর্গের সেই দেবীর সম্পর্কে নেতিবাচক কিছু বলা এবং শোনা যেন পাপ।
বাবা যখন থেকে আলাদা থাকে তখন থেকে খুব সামান্য পরিমাণ সংসার খরচ দিতেন। অভাবের অভিশাপ কতটা জঘন্য তা আমরা প্রতিটা সেকেন্ডে যেন উপলদ্ধি করতে থাকি।
এভাবে পাঁচ মাস কেটে গেল। দাদী মারা গেলেন। দাদী মারা যাবার পর থেকে ছোট চাচা আমার লেখাপড়ার জন্য কিছু টাকা প্রতি মাসে দেয়া শুরু করলেন।আমি সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী ছিলাম।তাই আমার লেখাপড়া বাবদ খরচ একটু বেশি হত।জিব্রান চতুর্থ শ্রেণীতে পড়তো। ওকে আমি নিজেই পড়াতাম।
এভাবে দিন পার হতে থাকে। আমি যখন দশম শ্রেণীতে পড়ি তখন এক্সট্রা শিক্ষক প্রয়োজন ছিল।এস এস সি পরিক্ষায় ভাল ফলাফলের জন্য। মা বুঝলেও নিরুপায় ছিল।কারন বাবা এক্সট্রা টাকা দিতে রাজি না।এর মাঝে বাবার ঐ সংসারে একটি মেয়েও হয়েছে।
একদিন দুপুরে মা অনেক বাজার করে বাসায় এলেন।আমার খুব অবাক লাগছিলো। কারন বাবার ঐ ঘটনার পর থেকে আমাদের জীবন ফ্যাঁকাসে হয়ে গেছে।ভাল বাজার হয়না বললেই চলে।
মা বাসায় এসে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললেন ,”রুবামা, তুমি তো বলেছিলে তোমার টিচার দরকার।ভাল একজন টিচারের কাছে পড়া শুরু করে দাও,আর জিব্রান কেও একটা কোচিং সেন্টারে ভর্তি করে দাও।ভাল ভাবে লেখাপড়া শুরু কর তোমরা।“
আমি বললাম ,’মা, টাকা জোগাড় হবে কিভাবে?’” মা বল্লেন,”আমি কিছু ছোট ছোট বাচ্চাকে পড়াবো। আজ বাচ্চাগুলোর বাবা-মার সাথে আমার কথা হয়েছে।“
সত্যি বলতে বিষয়টা আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হয়নি।আজকাল টিউশন পাওয়া এতো সহজ না। বাবা-মায়েরা শিক্ষকের educational background ভাল না হলে তাকে বাছাই পর্বেই বাতিল করেন। আর মা তো ম্যাট্রিক পরিক্ষাও দিতে পারেননি, বিয়ে হয়ে যাবার কারনে।যাই হোক, আমি বিষয়টা আর ঘাঁটালাম না।
মার কথা মত আমি টিচারের কাছে পড়া শুরু করলাম আর জিব্রানকেও কোচিং সেন্টারে ভর্তি করলাম।
আরও কিছু দিন এভাবে কেটে গেল। আমার এস এস সি পরীক্ষা শেষ হল। তখন রেজাল্ট দেয়নি। মা প্রতিদিন বাচ্চা পড়াবার কথা বলে বাইরে বের হন।ফেরেন রাত দশটা- এগারটার সময়। কোন অভাব নেই,ভাল চলছি আমরা।
একদিন বিকালে জিব্রান ক্রিকেট খেলতে বের হল। বাসার সামনের একটা চায়ের দোকান আছে। চাওয়ালা জিব্রানকে ডেকে বলে,”বাবু, তোর মা কই?”বলেই খিকখিক করে টিটকারির হাঁসি হাসছেন। ওনার হাঁসি দেখে জিব্রান মেজাজটা ঠিক রাখতে পারেনি।
জিব্রান একটু উচ্চস্বরেই বলে,” ঐ মিয়া, হাসেন কেন? চা-ওয়ালা মাথা নিচু করে চা বানাচ্ছে আর হেঁসেই যাচ্ছে।
এইবার জিব্রান তার কাঁধে ধাক্কা দিয়ে বলল,”আমারে দেখতে কি মদন মনে হয়? হাসেন কেন?
চা-ওয়ালা এবার হাঁসি বন্ধ করে জিব্রানকে বলে,”কাশেম মিয়াঁর বাড়িত গিয়া দেখ, তোর মায়ে কি পড়াইতে যায়। “জিব্রান স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল তখন।কাশেম ,এলাকার একজন সম্পদশালী লোক। কিন্তু তার চরিত্রের বেহাল দশা।পর পর দুইটা বউ চলে গেছে ওনার নোংরামি সহ্য করতে না পেরে।মা ওখানে কেন?
জিব্রান প্রায় দৌড়েই কাশেমের বাড়ি গিয়ে জোরে জোরে দরজায় করা নাড়তে থাকে।কাশেম দরজা খোলে। জিব্রানকে দেখে কাশেম অপ্রস্তুত হয়ে যায়।
জিব্রান কাশেমকে বলে,” চাচা ,আমার মা নাকি আপনার বাসায়?”
কাশেম মিয়া তো উত্তর দিতে পারেনি। উত্তর জিব্রান পেয়ে গেছে দরজার কাছে তার মায়ের স্যান্ডেল জোড়া দেখে।কিছু না বলে কাঁদতে কাঁদতে জিব্রান বাসায় ফিরেছিল। আমাকে জড়িয়ে ধরে শিশুর মত কেঁদেছে আমার ভাইটা। আমি সব শুনে কিছুই বলতে পারিনি।পাথর হয়ে গেছিলাম।
জিব্রান ফেরার দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পর মা ফিরলেন।মাথা নিচু করে, কতটা লজ্জায় তা আমি অনুভব করতে পারছিলাম।আমি কাউকেই সান্ত্বনা বা সহানুভূতি দেখাতে পারিনি।জিব্রানের ঘরের দরজা বন্ধ।মা বারান্দায় চেয়ারে বসে আছেন।মা কাদেনি। চাঁপা কষ্টে যেন মা ভেঙ্গেচুরে যাচ্ছে। আমি জানি না,জিব্রান মাকে খারাপ ভাবছে কিনা বা কতটা ঘৃণা করছে। আমার দৃষ্টিতে মায়ের কোন দোষ ছিলনা।মা নিরুপায় ছিলেন।আমার এই বিচার বুদ্ধি হয়তো সাধারণ সমাজে নীতিবিরুদ্ধ,কিন্তু আমি জানি আমি ঠিক। মা আমাদের জন্য নিজের সত্ত্বাটাকে হত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন।
রাতে আমরা কেউ খাইনি।জিব্রান ঘর থেকে বের হয়নি।আর মা বারান্দাতেই বসে ছিলেন।রাত প্রায় তিনটার সময় আমার ঘুম ভাঙে জিব্রান আর মায়ের করুন কান্নার শব্দে। দৌড়ে বারান্দায় গেলাম।দেখি জিব্রান মার পা জড়িয়ে আছে আর মা ওকে জাপটে ধরে কাদছে।আমি সত্যি বলতে কখনই ভাবিনি জিব্রান জঘন্য সত্য এই বাস্তবতাকে এই কিশোর বয়সে পরিপক্ব মানসিকতা দিয়ে বুঝতে পারবে। ও কাঁদতে কাঁদতে বারবার বলছে,” মা তোমার কোন দোষ নাই।আমি বাবাকে কেটে ফেলবো। ঐ লোকটা আজ আমাদের এখানে নামাল ,মা”
জিব্রানকে শান্ত করে ওর ঘরে পাথালাম।মাকেও ঘরে নিয়ে আসলাম ঘুমাবার জন্য। সকালে উঠে মাকে আর বাসায় পাইনি। আত্মীয়স্বজন কারো বাড়িতে খোঁজ নিতে বাকি রাখিনি আমরা। বাড়িতে বাবা, চাচা আর মামা এলেন।আমি সবই ওদের সামনে বলে দিয়েছি।আমার ধারনা ছিল ওরা আমার মাকে হয়তো আরও কিছু আজেবাজে বলবে।কিন্তু বলেনি।জিব্রান কয়েকবার তেড়ে আসতে ধরেছিল বাবার দিকে। ওর একটাই কথা,” সব তোর জন্য হয়েছে। “ চাচা বাবাকে বললেন ,”ভাই তোমার জীবনে এগুলোই পাওনা ছিল” বাবার মুখ দেখে মনে হচ্ছিল অপরাধবোধে ভুগছেন। কিন্তু তাতে কি?এই বোধের কোন মূল্য কি আছে?
এর পর থেকে আমরা চাচার বাসাতেই ছিলাম।বাবা আর চাচা দুজনই আমাদের ভার নেয়। জিব্রান অবশ্য এসবের পর থেকে বাবার সাথে কখনো কথা বলতো না।এভাবে আমার অনার্স- মাস্টার্স পরিপূর্ণ হয়।জিব্রান রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়তে থাকে। আমার বিয়ে হয়ে যায় একজন ব্যাংকের কর্মকর্তার সাথে।আমি একটি কলেজের লেকচারার।
আমরা মায়ের খোঁজ পেয়েছিলাম,নানি বাড়ির এক আত্মীয়ের কাছে।মা আসলে তার গ্রামের বাড়িতেই ছিলেন।মানে আমাদের নানা বাড়িতেই ছিলেন।মামা মায়ের খরচ বাবদ কিছু টাকা পাঠাতেন। জিব্রান মাকে নিয়ে এসেছিল ঢাকায়। কিন্তু মা বেশিদিন বাঁচেন নি। হয়তো উনি লজ্জার অনুভূতিটা কাটাতেই পারছিলেন না। আর আমরাও মাকে বুঝাতে পারিনি যে আমাদের চোখে সে নিষ্পাপ।
জিব্রান ডাক্তার হিসেবে বেশ নাম করেছে।বিয়েও করেছে ও। জিব্রানের ছেলে আর আমার ছেলের মাঝে খুব ভাব।জিব্রান এখনো অবসরে দীর্ঘশ্বাসে আমাকে বলে,”আপু,আমাদের মায়ের পৃথিবীতে জন্ম হয়েছিল উদাহরন হিসেবে।যে কিছুই পেলনা। আমি আমার বাবার মত বাবা নই।আমি আমার পরিবারকে ভালবাসি।
Source :- https://footprint.press
প্যারাডক্স
Fundamental Sharif
December 11, 2017
কিছু অভ্যাস আমাদের জীবনে আনন্দ নিয়ে আসে, আমাদের জীবনকে সাফল্যের উচ্চ শিখরে নিয়ে যায়। আবার অন্যদিকে এমন কিছু অভ্যাস রয়েছে যা প্রতিনিয়ত আমাদের পিছিয়ে দিচ্ছে। আমাদের ক্যারিয়ারের গুরুত্বপুর্ন সময় নষ্ট করে নিজেকে ব্যর্থ ব্যক্তিতে পরিণত করছি। অথচ, আমরা তা খেয়াল করছি না। এমন কিছু অভ্যাস সম্পর্কে আলোচনা করবো যা আমাদের জীবনকে নিরবে অভিশাপে পরিণত করছে। আমাদের ক্যারিয়ারকে ধবংস করে দিচ্ছে।
১. অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারঃ
এটি বর্তমানে অন্যতম বড় একটি সমস্যা। এটি এমন একটি অভ্যাস যা আপনার গুরুত্বপূর্ন সময়কে হত্যা করে আপনাকে সবার থেকে পিছনে ফেলে দিবে, তা জানতেও পারবেন না। আপনি একজন ছাত্র বা যেকোন পেশায় হোন না কেন এই সোশ্যাল মিডিয়া সবার জীবনেই খারাপভাবে প্রভাবিত করে। মুহুর্তেই কয়েক ঘন্টা সময় নষ্ট করে দেয় সোশ্যাল মিডিয়াগুলো। ছাত্র-ছাত্রী পড়ালেখা করার সময় মাঝে মাঝে, চাকুরীজীবি কাজের ফাঁকে ফাঁকে একটু ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি সোশ্যাল মিডিয়াগুলো ভিজিট করে। যার ফলে মনোযোগ নষ্ট হয় এবং প্রোডাক্টিভিটি নষ্ট হয়। আর যদি ইউটিউব এ ধুকে যান তখন কিভাবে সময় চলে যায় তা আসলে কেউই বুঝে না, এই ভিডিও থেকে সেই ভিডিও (Suggested Video আমাদের অনেক প্রভাবিত করে) তাই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন, কাজের মাঝে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার করবেন না।
২. রেজাল্ট ট্র্যাক না করাঃ
রেজাল্ট ট্র্যাক না করা একটি খারাপ অভ্যাস তা আমরা জানি না। শুধু মাত্র এই অভ্যাসের জন্য আপনার জীবনে কতটুকু অগ্রগতি হচ্ছে সেটাও আপনি জানেন না। আপনি অন্ধকারে হাঁটছেন। আমরা কোন একটি কাজ শুরু করলে সেই কাজ নির্দিষ্ট সময় পরে কতটুকু হল, কতটুকু হওয়া প্রয়োজন ছিল, আমার প্রচেষ্টা কি ঠিক মত আছে কিনা? আর কি করা যেতে পারে ইত্যাদি জানার প্রয়োজন মনে করি না। যার কারণে সময় শেষ হয়ে গেলেও কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় না। সফলতা পেতে একজন প্রফেশনালকে তার কার্যক্রমের রেজালট ট্রেক করা উচিত। এই স্বভাবটি ছোট বেলা থেকে শুরু করতে পারলে অনেক ভালো, যেমন-আপনি পরীক্ষা দিয়ে আসার পর যদি দেখেন কি কি ভুল করলেন আর কি ভুল করলেন না সেখান থেকেই বুজতে পারেন যে আগামীকালের পরীক্ষা এর জন্য কতটুকু প্রচেষ্টা করা উচিত আপনার কিন্তু আমরা তা দেখি না তাই পরের দিনের কার্যক্রম খুব স্বাভাবিক থাকে বা আরো ভালো এর তেমন প্রচেষ্টা থাকে না।
৩. অতিরিক্ত চিন্তা করাঃ
অতিরিক্ত চিন্তা, যা আমাদের মধ্যে প্রায়ই দেখা যায়। অনেকে খুব ছোট কোন কাজ করতে গিয়ে কাজ শুরু করার পূর্বেই চিন্তা করা শুরু করে কি করছি? কেন করছি? করে কি হবে? এটা করলে কি কি সমস্যা তৈরি হবে? ইত্যাদি। অনেকে বলতে পারেন কাজ শুরু করার পূর্বে এই ধরনের চিন্তা ভাবনা করে শুরু করলেতো ভালো।হ্যা ভালো কিন্তু আপনি যদি শুধু চিন্তাই করে যান কোন কাজ না করেন বা চিন্তায় ভয় পেয়ে কাজ আর শুরুই না করেন তখন ক্যারিয়ার সামনে আগাবে না। আবার অনেক চিন্তা আছে যা করার দরকার হয় না বা যা ঘটে গিয়েছে তা নিয়ে ভেবে কোন লাভ নেই কিন্তু আমরা সেতাই ভাবতে থাকি এবং এর জন্য সামনের ঘটনা এর মধ্যে আরো সমস্যা সৃষ্টি হয়। ছোট করে উদাহরণ দেই, ধরুন আপনার একটি পরীক্ষা খারাপ হয়েছে, সেটা ভেবেই আপনি আর কিছু চিন্তা করতে পারছেন না এবং এর কারণে আপনার পরবর্তী পরীক্ষাটাও খারাপ হবে কারণ দুশ্চিন্তা এর কারণে আপনি পরবর্তী পরীক্ষা এর জন্য নিজেকে তৈরি করতে পারছেন না।
৪. পর্যাপ্ত পরিমান না ঘুমানোঃ
সোশ্যাল মিডিয়া, মুভি, খেলা ইত্যাদির জন্য অনেকে ঘুমানোর সময়ই পায় না। আবার অনেকে কাজের ব্যস্ততায় ঘুমানোর সময় পায় না। যেমনঃ ফ্রীলেন্সাররা অনেকে ঘুমানোর চেয়ে কাজ করতে বেশি ভালোবাসে কিন্তু আপনার উচিত পর্যাপ্ত পরিমান ঘুমানো। কারণ পর্যাপ্ত পরিমান না ঘুমালে আপনার ক্লান্ত লাগবে, এনার্জি হারাবেন, প্রডাক্টিভিটি কমে যাবে। আর যদি অসুস্থ হয়ে যান তাহলে তো কয়েক দিনের জন্য কাজ সম্পূর্ন বন্ধই করে দিতে হয়। এছাড়া দীর্ঘদিন পর্যাপ্ত পরিমান ঘুমের অভাবে শরীরে বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয় যা প্রফেশনাল জীবনে বড় বাঁধা হয়ে দাড়ায়। আর সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে কম ঘুমের কারণে আপনার চিন্তা শক্তি কমতে থাকে, যা আপনি বুজতেই পারবেন না। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক (২৬-৬৪) বছর বয়সীকে ৭-৯ ঘণ্টা প্রতিদিন ঘুমানো উচিত। (৭-৯ ঘণ্টা ভেঙ্গে ভেঙ্গে নয়, একটানা)
৫. নেতিবাচক চিন্তাভাবনা করাঃ
খুব সাধারন সমস্যা। কোন কাজ করার আগেই করা যাবে না এই ধরণের চিন্তা ভাবনা করা। কিন্তু আপনি বুঝতেই পারবেন না এটি যে আপনার একটি বড় সমস্যা। কারণ আপনার কাছে মনে হবে আমি পারবোনা দেখেইতো কাজটি করা বন্ধ করে দিয়েছি। শুধুমাত্র এই একটি অভ্যাসের জন্য আপনার জীবন থেকে অনেক বড় বড় সুযোগ হারিয়ে যেতে পারে। আপনি নিজেকে অনেক বড় স্থানে নিয়ে যাওয়া থেকে বঞ্চিত করবেন। তাই নেতিবাচক চিন্তাভাবনা করা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন এবং সুযোগগুলো কাজে লাগান। মনে রাখবেন কাজ না করার চেয়ে কাজ করে ব্যর্থ হয়ার মধ্যে অনেক লাভ।অভিজ্ঞতা হয়, জানা হয়, শেখা হয়। আর যেখানে পুরো জীবনটাই একটা ঝুঁকি সেখানে আর ঝুঁকি নিতে ভয় কিসের।
৬. নিখুঁতভাবে কাজ না করার অভ্যাসঃ
এটি এমন একটি খারাপ অভ্যাস যা অলসতার কারণে হয়। এটি আপনাকে সবার থেকে পিছিয়ে রাখবে এবং আপনার কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। যেমনঃ অনেক ছাত্র পড়ালেখা করার সময় শুধু পরীক্ষায় উত্তর দেওয়ার জন্য পড়ে কিন্তু নিখুঁতভাবে কোন প্রশ্নের উত্তর বুঝে পড়ে না। যার কারণে পরীক্ষায় পরিপূর্নভাবে ফলাফল পায় না। আবার অনেক কর্মজীবিরা তার ঊর্ধ্বতন এর দেয়া কাজ সম্পন্ন করে কিন্তু নিখুঁতভাবে করে না। যার ফলে তাকে সে কাজ পুনরায় করতে হয়। তাই আপনার এই ধরনের অভ্যাস যদি থাকে তা দূর করে ফেলুন। প্রতিটি কাজ সুন্দরভাবে নির্ভুলভাবে করুন সকল ক্ষেত্রে সফলতা পাবেন।
৭. সময় সচেতন নাঃ
এই সমস্যা খুজলে সাবার মাঝেই পাবেন। বিশেষ করে আমাদের দেশের মানুষের রক্তের সাথে মিশে গিয়েছে এই অভ্যাসটি। আমরা মোটেও সময় সচেতন নই। কোন কাজই সময়মত করতে পছন্দ করি না। যার ফলে আমাদের ক্যারিয়ারও সময়মত আগায় না। যার কারনে আমাদের ৪ বছরের গ্রেজুয়েশন করতে ৬ বছর লেগে যায়। ১০ মিনিটের কাজ জমা দিতে ১ ঘন্টা লেগে যায়।সময়কে গুরুত্বদিন সময়মত আপনিও গুরুত্বপূর্ন হয়ে উঠবেন।
৮. নিজের মার্কেটিং না করাঃ
এই খারাপ অভ্যাসটি বিশেষ করে ফ্রীলেন্সারদের থাকা উচিত না। কিন্তু তাদের মাঝেই অনেক দেখা যায়। তারা মনে করে একটি মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট খুললাম আর কিছু বিড করলাম তারপর কাজ শেষ ডলার ইঙ্কাম শুরু হয়ে যাবে। না আপনাকে কেউ এসে কাজ দিয়ে যাবে না। আপনার নিজেকেই মার্কেটিং করতে হবে। মানুষকে জানাতে হবে আপনি কে? আপনি কি করেন? আপনি কোন কাজগুলোতে দক্ষ। তাহলেই আপনাকে কাজ দিতে চাইবে।
Moshiur Monty
Digital Marketing Trainer, Bdjobs Training.
web - http://moshiurmonty.com
ক্যারিয়ার ধ্বংসে যেসব অভ্যাস দায়ী
Fundamental Sharif
December 11, 2017
ফেসবুক এখন আমাদের নিত্য দিনের একটি অংশ। প্রতিদিনই আমরা বিভিন্ন কাজে ফেসবুক ব্যবহার করি। শুধু যোগাযোগ না ব্যবসায়িক প্রচারে বা ব্যক্তিগত সুনাম বৃদ্ধিতেও আমরা ফেসবুক ব্যবহার করি।
ফেসবুক ব্যবহার বা ফেসবুক মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে প্রতিদিন আমাদের ফেসবুক ফিডে পোষ্ট করতে হয়। প্রতিটি পোষ্ট ফেসবুক মার্কেটিং এর জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ন। যেমন তেমন ভাবে পোষ্ট করলে তা থেকে কোন লাভ আসবে না বরং সময়ের অপচয় হবে এবং সুনাম ক্ষুণ্ণও হতে পারে। পোষ্ট অবশ্যই এমন হতে হবে যেন পাঠক আপনার লেখা পড়ে আপনার সম্পর্কে বা আপনার পণ্য সম্পর্কে আরো বেশি জানতে আগ্রহী হয়। একটি ভালো এবং প্রফেশনাল মানের পোষ্ট তৈরি করতে কয়েকটি বিষয়ের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হয়।
১. ছোট পোষ্ট করাঃ
ফেসবুক পোষ্টের ক্ষেত্রে আমরা কখনও ছোট আবার কখনও বড় লেখার পোষ্ট করে থাকি। এই ছোট বড় পোষ্টের মধ্যে ছোট পোষ্ট অনেক বেশি কার্যকরী। অল্প কথায় তথ্যবহুল পোষ্ট যা ফলোয়ারদের উপকারে আসবে সেই ধরনের পোষ্টের এঙ্গেজমেন্ট অনেক বেশি হয়। পোষ্ট যদি বেশি বড় হয় তাহলে অনেকে লেখার পরিমান দেখে পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে অথবা কিছু পড়ে বাকি অংশ শেষ না পড়েই চলে যায়। আবার পোষ্ট শুধু ছোট হলেই হয় না। পোষ্ট লেখার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মনে রাখতে হয়। যেমনঃ
> পোষ্ট যেন অপ্রাসঙ্গিক না হয়ে যায়।
> পোষ্টে কোন উদাহারণ দিলে বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে উদাহরণ দিতে হবে।
> পোষ্ট একটু বড় হলে কয়েকটি প্যারার মাধ্যমে লেখা।
২. প্রফেশোনাল মানের ছবি পোষ্ট করাঃ
ফেসবুকে এঙ্গেজমেন্ট বৃদ্ধি করার জন্য সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতি হল ছবি। একটি লেখাকে সহজে তুলে ধরে এমন কোন প্রফেশনাল মানের ছবি যখনই কোন লেখার সাথে দেয়া হয় তা খুব দ্রুত ফলোয়ারদের চোখে পড়ে এবং বেশি Reach হয়। ছবিটি দেখার পরেই লেখা পড়ার আগ্রহ বৃদ্ধি পায় এবং আপনার সার্ভিস বা পণ্যের সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক হয়। তাই ভালো ছবি প্রকাশ করা মানে ফলোয়ারদের মাঝে এটি রিচ হওয়া।
৩. ভিডিও পোষ্ট করাঃ
ভিডিও হল বর্তমান সময়ে অনলাইন মার্কেটিং করার অন্যতম একটি হাতিয়ার। ফেসবুক পোষ্টের ক্ষেত্রেও ভিডিও অনেক কার্যকরী। আপনি একটি ভিডিওর মাধ্যমে আপনার পণ্যের বা ব্যবসায়ের অথবা আপনার ব্যক্তিগত সার্ভিসের তথ্য খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরতে পারবেন যা অন্য কোন মাধ্যমে করা যায় না। ফেসবুক পোষ্ট করতে কিছু লেখার সাথে একটি ভিডিও পোষ্ট করলে সেটি আপনার ব্যবসায়ের বিক্রয় বৃদ্ধি করতে অনেক সাহয্য করবে।
৪. কাস্টমারদের সাড়া দেয়াঃ
প্রতিটি ফেসবুক পোষ্টের উদ্দেশ্য হল ফলোয়ারদের আকর্ষন করা, তাদের নতুন নতুন তথ্য দেয়া তাদেরকে কাস্টমারে পরিনত করা। অনেক সময় পোষ্ট পড়ে ফলোয়ারদের মাঝে কিছু না কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়। সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য অথবা আরও কিছু জানার জন্য কমেন্ট করে। পোষ্টের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করার জন্য এই সকল কমেন্টের বা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
এই সাড়া আবার সঠিক সময়ের মধ্যে দিতে হয়। ফলোয়ার যদি প্রশ্ন করার পর অনেক সময় অপেক্ষা করে তাহলে আপনার এবং ব্যবসায়ের প্রতি তার মাঝে একটি নেতিবাচক ধারনা সৃষ্টি হতে পারে। তাই যথা সময়ে ফলোয়ারদের সাড়া দিতে হয়।
৫. বিশেষ দিনের জন্য বিশেষ পোষ্টঃ
প্রতি বছর কিছু বিশেষ দিন আছে যেমনঃ ঈদ, পহেলা বৈশাখ ইত্যাদি। এই বিশেষ দিনগুলো এঙ্গেজমেন্ট বৃদ্ধি করার জন্য ভালো অবদান রাখে। তাই বিশেষ দিনে অবশ্যই একটি ভালো ছবি যা দিনটিকে তুলে ধরবে, তা দিয়ে পোষ্ট করতে পারেন। এই দিনে যদি আপনি আপনার ফলোয়ারদের স্মরণ করেন তাদের শুভেচ্ছা জানান তাহলে তারও কমেন্টের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানাবে। এটি সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে এবং নতুন কাস্টমার তৈরি করতে সাহায্য করে।
৬. পোস্টের সাথে ওয়েব সাইটের লিঙ্ক দেয়াঃ
যখন আপনি আপনার ওয়েবসাইটের লিঙ্ক ফেসবুক পোষ্টে দিবেন তখন অটোমেটিক ভাবে ওয়েবসাইট থেকে একটি ইমেজ পাবে এবং ক্লিক করার একটি বড় ক্ষেত্র তৈরি হবে।ওয়েবসাইটে ভিজিটর পাঠানোর জন্য এটি খুব ভালো পদ্ধতি। আপনি চাইলে হেডলাইন ও লিখে দিতে পারেন।
৭. কাস্টমার বা ফলোয়ারদের জিজ্ঞাসা বা ইচ্ছাঃ
যখন আপনি বুঝতে পারবেন কাস্টমার আপনার পেজ থেকে কি চায় তখন শুধু সেই ধরনের পোষ্ট দেন। তারা যেই পোষ্ট পছন্দ করে না সেই পোষ্ট করা উচিত নয়।
আবার কাস্টমার বা ফোলোয়ারদের বিভিন্ন কমেন্টগুলো পড়ে তাদের জিজ্ঞাসা বা ইচ্ছা অনুযায়ী বিভিন্ন পোষ্ট তৈরি করতে পারেন। এই ধরনের পোষ্টের এঙ্গেজমেন্ট অনেক বেশি হয়। যেমনঃ যদি আপনি কোন সার্ভিস বিক্রয় করেন এবং সেই সার্ভিসে কিছু সমস্যা কাস্টমাররা উল্লেখ করলে আপনি তার সমস্যার সমাধান দিয়ে একটি পোষ্ট তৈরি করতে পারেন।
ফেসবুক-এর প্রতিটা পোষ্ট একটি ব্যবসায়ের বা ব্যক্তির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ন তাই অবশ্যই পোষ্ট করার পূর্বে এই বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করে পোষ্ট করা উচিত।
Source - http://moshiurmonty.com
কিভাবে একটি কার্যকরী ফেসবুক পোষ্ট তৈরি করতে হয়?
Fundamental Sharif
December 11, 2017
আজ ঈদ। ঝিলমের আজ ভীষণ মন খারাপ। বারান্দার গ্রিলটা ধরে ঝিলম দাঁড়িয়ে আছে। তাদের বাসার সামনের বিশাল মাঠটা বৃষ্টির পানিতে থই থই। পাশেই পচা ডোবা, ডোবা ভরা বেগুনি রঙের কচুরিপানার ফুল। কচুরিপানার ফুল ঝিলমের ভীষণ প্রিয়। ঝিলমের খুব কান্না পাচ্ছে। আজ ঈদ অথচ ঝিলমের নতুন কোনো জামা নেই। সব ছেলেমেয়ে ঈদের নতুন জামা পরে ঘুরতে বেরিয়েছে। আর সে একা একা এখানে দাঁড়িয়ে। মায়ের ওপর ভীষণ অভিমান হচ্ছে। মা কি তাকে একটুও বোঝে না? একটাই তো নতুন জামা চেয়েছিল, তাও মা তাকে দিতে পারল না? তার সব বান্ধবী যে পাঁচ-ছয়টা করে জামা পেয়েছে অথচ তার একটাও নেই। কীভাবে সে বাইরে যাবে? কীভাবে বান্ধবীদের বলবে তার একটা জামাও নেই? সবাইকে যে সে বলে রেখেছে মা তাকে পাঁচটা নতুন জামা কিনে দিয়েছে। গতকাল মায়ের একটা নতুন শাড়ি কেটে মা তার জন্য একটা ফ্রক বানিয়েছে। তাও সেলাইয়ের টাকা বাঁচানোর জন্য তার খালামণিকে দিয়ে সেলাই করিয়েছে। খালামণিকে তার একটুও পছন্দ না। এত পচা একটা ফ্রক বানিয়েছে। আবার বলে, ‘এই ঝিলম, দেখ দেখ কী সুন্দর ফ্রক বানিয়েছি। দেখি আয় তো একটু গায়ে দিয়ে দেখা।’ অনিচ্ছা সত্ত্বেও মুখটা গোমড়া করে তাকে ফ্রকটা পরতে হয়েছে। ইশ্ হাতাটা কী ঢোলা, এত ঢোলা কি কেউ পরে? এটা সে কোনো দিনও পরবে না...। তার চোখ ভরে পানি চলে আসে আর খালামণি বলে, ‘ওমা তোকে তো খুব মানিয়েছে।’ ছাই মানিয়েছে, কচু মানিয়েছে, ঝিলম মনে মনে বলে। জামাটা খুলে সে মায়ের বিছানার ওপর ফেলে দৌড় দিয়ে বারান্দায় আসে। তার খুব চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে...‘ঝিলম, এই ঝিলম’...মায়ের গলা ভেসে আসে। ‘এদিকে আয় তোর বান্ধবীরা এসেছে। কী রে এখানে দাঁড়িয়ে কেন? পৃথা আর তন্বী এসেছে। চল রেডি হয়ে ওদের সঙ্গে একটু বাইরে বেরিয়ে আয়।’ ঝিলম মায়ের দিকে তাকায়, কী অদ্ভুত মায়ায় ভরা মুখ মায়ের। সে তার মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বলতে পারে না যে, মা, আমি ওই জামা পরব না।
‘কী রে তাকিয়ে আছিস কেন? চল...তোর দুলাভাইয়ের দেওয়া জামাটা পর, ওটা তো এক দিনও পরিসনি।’ ঝিলমের আবার কান্না পায়। এক বছর আগে দুলাভাই তাকে একটা ফ্রক দিয়েছিল, ওটাও তার পছন্দ না, কেমন বিচ্ছিরি হলুদ রঙের। মা হাত ধরে ঝিলমকে নিয়ে আসে। জামা পরিয়ে চুল বেঁধে ২০ টাকা ঈদি দেয়। পৃথা আর তন্বীর সঙ্গে ঝিলম বেরিয়ে আসে। পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে মা ঠিক তার মতো বারান্দায় গ্রিলটা ধরে তার দিকে তাকিয়ে আছে। এত দূর থেকেও ঝিলম বোঝে মায়ের চোখে পানি। মা মিষ্টি হেসে হাত নেড়ে তাকে বিদায় জানায়।
ঝিলম মুখটা ফিরিয়ে নেয়। তার চোখ ভরে পানি আসে। জামা নিয়ে তার আর কোনো কষ্ট নেই। সে জানে মা এখন ঘরের দরজা বন্ধ করে ফুঁপিয়ে কাঁদবে, যেমনটা সে প্রতি রাতে কাঁদে। তার বাবা বিদেশ থাকে, আজ ছয় মাস বাবার কোনো খোঁজ নেই। মায়ের অনেক কষ্ট। ঝিলম মনে মনে বলে, মা, তুমি কেঁদো না। সব ঠিক হয়ে যাবে মা। সব ঠিক হয়ে যাবে। ঝিলমের চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।
মারিয়া সুলতানা
এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়
হলুদ ফ্রক
Fundamental Sharif
December 11, 2017