আম্মু আর আমি যখন স্কুলে যেতাম
আমার বয়স যখন ছয়, আব্বু আমাকে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি করে দিল। তার দুই বছর পর আম্মুও ভর্তি হলো একটা গার্লস স্কুলে। আমার স্কুল আর আম্মুর স্কুল পাশাপাশি ছিল। আমি আম্মুর সঙ্গে প্রায়ই স্কুলে যেতাম। মজার ব্যাপার হলো, আম্মুর সঙ্গে স্কুলে যাওয়া আর মজা করে ফুচকা খাওয়া। আম্মু নবম শ্রেণীতে ভর্তি হয়। আম্মু প্রতিদিন স্কুলে যেতে পারত না, কারণ আমার যে দাদি ছিলেন, তাঁর দেখাশোনা করতে হতো। আমার দাদির মানসিক সমস্যা ছিল। সারা দিন বাড়ির গেট ঝাঁকাতেন বাইরে যাওয়ার জন্য। তিনি বাইরে গেলে হারিয়ে যেতেন, এই জন্য তাঁকে বাইরে যেতে দেওয়া হতো না। আমার ফুপাতো বোন ছিল, সে তিন দিন দেখত আর আম্মু তিন দিন দেখত—এভাবে স্কুল করত।
আমার সঙ্গে আম্মুর দুই দিন করে দেখা হতো স্কুল ছুটির সময়। আম্মু তার বান্ধবীদের সঙ্গে আসত। আমিও তাদের সঙ্গে যোগ দিতাম। স্কুলের কাছেই আব্বুর কসমেটিকসের দোকান ছিল। আমি আর আম্মু প্রায়ই আব্বুর দোকানে গিয়ে টাকা নিতাম আর ফুচকার দোকানে গিয়ে ফুচকা খেতাম। অনেক দিন দুজনে হাত ধরাধরি করে যেতাম রাস্তা দিয়ে। একদিন স্কুল ছুটির পর আম্মু তার সঙ্গীদের সঙ্গে আসছে। আমিও তাদের সঙ্গে যোগ দিলাম। আম্মুর হাতে আলুর চপ ছিল, সবাই খাচ্ছে, আমিও সেখান থেকে নিলাম। আম্মুর এক বান্ধবী বলল, এটা তোর কে? আম্মু বলল, এটা আমার ছেলে। শুনে সবাই অবাক! বিস্ময়ে ওদের আলুর চপ চিবানো বন্ধ হয়ে গেল। ওরা বলল, তুই মিথ্যা কথা বলছিস! আম্মু বলল, তাহলে ওই দোকানে চল, তবেই বিশ্বাস হবে। তারপর আম্মু সবাইকে আব্বুর কাছে নিয়ে গেল। ওরা আব্বুকে জিজ্ঞেস করলে আব্বু বলে, হ্যাঁ, ও আমার পরিবার। একজন বলে উঠল, আমার জীবনে এ রকম ঘটনা দেখি নাই, শুনিও নাই যে ছেলে-মা একসঙ্গে চপ খেতে খেতে বাড়ি যায়, আবার স্কুলে লেখাপড়া করে। আরেকটা মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমার আম্মুকে কিন্তু আমি দুই নামে ডাকি, একটা আম্মু আর একটা আম্মা। যখন যেটা খুশি। দাদি মারা গেছেন বছর সাত আগে। আম্মুর সঙ্গে স্কুলে যাবার দিনগুলো মিস্ করি খুব।
আব্দুল কাইয়ুম
0 comments:
Post a Comment