যশোর ব-১১-০১৯
—আসসালামু আলাইকুম ভাইজান।
—ওয়ালাইকুম সালাম!
—ভাইজান, ভালো আছেন?
—জি, আছি। আপনাকে তো ভাই ঠিক চিনলাম না!
—আমি বদর আলী।
—উমমম...বদর আলী...বদর আলী...নাহ্ চিনতে পারছি না।
—আপনে আমারে চিনেন। কয়দিন থেইকা সারা বাংলাদেশ আমারে চিনে।
—বেশ কয়দিন আগে কী হয়েছিল?
—মনে করার চিষ্টা করেন ভাইজান। আপনে মনে করতি না পারলি কিরাম হবেনে ব্যাপারটা...
—আরে এত নাটক না করে বলেন না আপনি কে...
—আমি বদর আলী।
—মশকরা করো মিয়া আমার সাথে তুমি? জানো আমি কে? নাম বললে লুঙ্গি উঁচায়া দৌড় দিবা।
—আমি তো জানিই আপনে কেডা।
—বল ব্যাটা আমি কে...নাইলে তোরে এইখানেই জ্যান্ত পুইত্তা ফালাব...আমার সাথে মশকরা...সাহস বাইড়া গেছে শালাগো...
বদর আলী নির্বিকার
—চেইতেন না ভাইজান। আপনের আগেও দুইবার হারটঅ্যাটাক হইয়েছে। শুনিছি তিনবার হলি মানুষ মইরে যায়।
থতমত খেয়ে যায় সোলায়মান আহমেদ (উচ্চতা র্৫ র্৮র্ -র্৫ ১র্০র্ বয়স ৪৫-৫০, বড় রাজনীতিবিদের ডান হাত)। কারণ, তার প্রথম হার্টঅ্যাটাকের কথা সবাই জানলেও দ্বিতীয়টির কথা দ্বিতীয় পক্ষের বউ ছাড়া কেউ জানে না। সামনে বসা বদর আলীকে খুব সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করে সোলায়মান। বয়স ৫০-এর কাছাকাছি। মাঝারি উচ্চতার। দেখে শিক্ষিত মনে হয় না। খেটে খাওয়া মানুষের মতো হাত-পা। চোখের দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে যায় সোলায়মান। কী ভয়ংকর শীতল দৃষ্টি! দেখলেই জান হিম হয়ে যায়।
সোলায়মান খুব শান্তভাবেই জিজ্ঞেস করে
—কে তুমি?
—আমি বদর আলী ভাইজান।
—আমার পার্টিতে বদর আলী নামে কেউ নেই। আর আমি এই নামে কাউকে চিনিও না।
—আমার ইস্তিরির নাম হাওয়া বেগম। আমারে অনেক ভালোবাইসত। দুইডে ছাওয়াল মাইয়ে আমার। মাইয়েডা কিলাস টেইনে পড়ে। ছাওয়ালডা কিছু করে না। বইখে গিছে...
—বদর আলী, আমি বুঝতে পারছি না। তুমি কেন আমাকে এসব বলছ...
—একটা বইনও আছে আমার। বিয়ি দিতি হতো। কিন্তু....কিরাম কইরে যে কী হবিনি...
—বদর আলী...
—জি, ভাইজান।
—কে তুমি?
—আমি বদর আলী।
—বল্ কে তুই, বল্ কে তুই...নিশ্চিত আমার শত্রুপক্ষ থেকে আমার ইনফরমেশন নিতে পাঠিয়েছে। তুই আজকে এখান থেকে জ্যান্ত ফিরে যেতে পারবি না...সোলায়মান খুব শক্ত জিনিস...
সোলায়মান দ্রুত তুমি থেকে ‘তুই’-এ নেমে আসে।
—আপনে চিক্কুর দিয়েন না ভাইজান...হারটে চাপ পড়বে...আপনের আগেও দুইবার হারটঅ্যাটাক হইয়েছে...তিনবার হলি মানুষ মইরে যায়...।
—চোপ শালা...একদম চোপ...আর একটা কথা বললে ভুঁড়ি ফাটায় দিব...
—ভাইজান, আমি ঠিকমতো খাতিই পাইনে, ভুঁড়ি আসবে কোনতে।
—গার্ডগুলো সব মরছে কোথায়...সবগুলোর ভুঁড়ি ফাটায় দিব আজকে...হারামখোরের দল...
—ওরা কেউ আসবিনে। ঘুম পাড়ায় এয়েছি...।
এইবার ঘাবড়ে যায় সোলায়মান। তার ধারণা, শত্রুপক্ষের কেউ বদর আলীকে পাঠিয়েছে তাকে মেরে ফেলার জন্য।
—আ...আ...আসবে না মানে!!! কী...কী...কী করেছেন ওদের...
—ভাইজান আমাকে কি আপনে চিনতে পারিছেন?
ভয়ার্ত সোলায়মান উত্তর দেয়—‘না...না...না...’
—আমি বদর আলী, বাস চালাইতাম। ঢাকা টু খুলনা।
ঈগল পরিবহন। যশোর ব-১১-০১৯। মনে পড়িছে?
—তু...তু...তুমি কে?
—ভাইজান, আপনে ভয় পায়েন না। আপনের আগেও দুইবার হারটঅ্যাটাক হয়িছে। না চিনতি পারলি কয়ে দিচ্চি। যেই বাসটাতে আপনের হুকুমে আগুন দেওয়া হয়েছিল, আমি সেই বাসের ডিরাইভার। চিষ্টা করিছিলাম, বাইরাতি পারিনি...পুইড়ে মরিছি...তাতি অবশ্য দুক্কু হয় না। শুধু কষ্ট লাগে ইস্তিরি আর ছাওয়াল-মাইয়ে দুডোর জন্যি। বইনডারও বিয়ি দিতি হতো...কিরাম কইরে যে কী হবিনি...
ভাইজান কি ভয় পেয়েছেন? ভয় পায়েন না...আপনের আগেও দুইবার হারটঅ্যাটাক হইয়েছে। শুনিছি, তিনবার হলি মানুষ মইরে যায়...
কিন্তু ততক্ষণে তৃতীয় হার্ট অ্যাটাকটা হয়ে গেছে সোলায়মানের।
বদর আলী বুঝতে পারে না সে প্রতিশোধ নিল কি না। বহুদিন পর মুক্তির অনুভূতি নিয়ে সে উড়তে থাকে আকাশের দিকে।
ওপরে...আরও ওপরে...
আফিয়া আবিদা
ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা।
source - Prothom alo
—ওয়ালাইকুম সালাম!
—ভাইজান, ভালো আছেন?
—জি, আছি। আপনাকে তো ভাই ঠিক চিনলাম না!
—আমি বদর আলী।
—উমমম...বদর আলী...বদর আলী...নাহ্ চিনতে পারছি না।
—আপনে আমারে চিনেন। কয়দিন থেইকা সারা বাংলাদেশ আমারে চিনে।
—বেশ কয়দিন আগে কী হয়েছিল?
—মনে করার চিষ্টা করেন ভাইজান। আপনে মনে করতি না পারলি কিরাম হবেনে ব্যাপারটা...
—আরে এত নাটক না করে বলেন না আপনি কে...
—আমি বদর আলী।
—মশকরা করো মিয়া আমার সাথে তুমি? জানো আমি কে? নাম বললে লুঙ্গি উঁচায়া দৌড় দিবা।
—আমি তো জানিই আপনে কেডা।
—বল ব্যাটা আমি কে...নাইলে তোরে এইখানেই জ্যান্ত পুইত্তা ফালাব...আমার সাথে মশকরা...সাহস বাইড়া গেছে শালাগো...
বদর আলী নির্বিকার
—চেইতেন না ভাইজান। আপনের আগেও দুইবার হারটঅ্যাটাক হইয়েছে। শুনিছি তিনবার হলি মানুষ মইরে যায়।
থতমত খেয়ে যায় সোলায়মান আহমেদ (উচ্চতা র্৫ র্৮র্ -র্৫ ১র্০র্ বয়স ৪৫-৫০, বড় রাজনীতিবিদের ডান হাত)। কারণ, তার প্রথম হার্টঅ্যাটাকের কথা সবাই জানলেও দ্বিতীয়টির কথা দ্বিতীয় পক্ষের বউ ছাড়া কেউ জানে না। সামনে বসা বদর আলীকে খুব সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করে সোলায়মান। বয়স ৫০-এর কাছাকাছি। মাঝারি উচ্চতার। দেখে শিক্ষিত মনে হয় না। খেটে খাওয়া মানুষের মতো হাত-পা। চোখের দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে যায় সোলায়মান। কী ভয়ংকর শীতল দৃষ্টি! দেখলেই জান হিম হয়ে যায়।
সোলায়মান খুব শান্তভাবেই জিজ্ঞেস করে
—কে তুমি?
—আমি বদর আলী ভাইজান।
—আমার পার্টিতে বদর আলী নামে কেউ নেই। আর আমি এই নামে কাউকে চিনিও না।
—আমার ইস্তিরির নাম হাওয়া বেগম। আমারে অনেক ভালোবাইসত। দুইডে ছাওয়াল মাইয়ে আমার। মাইয়েডা কিলাস টেইনে পড়ে। ছাওয়ালডা কিছু করে না। বইখে গিছে...
—বদর আলী, আমি বুঝতে পারছি না। তুমি কেন আমাকে এসব বলছ...
—একটা বইনও আছে আমার। বিয়ি দিতি হতো। কিন্তু....কিরাম কইরে যে কী হবিনি...
—বদর আলী...
—জি, ভাইজান।
—কে তুমি?
—আমি বদর আলী।
—বল্ কে তুই, বল্ কে তুই...নিশ্চিত আমার শত্রুপক্ষ থেকে আমার ইনফরমেশন নিতে পাঠিয়েছে। তুই আজকে এখান থেকে জ্যান্ত ফিরে যেতে পারবি না...সোলায়মান খুব শক্ত জিনিস...
সোলায়মান দ্রুত তুমি থেকে ‘তুই’-এ নেমে আসে।
—আপনে চিক্কুর দিয়েন না ভাইজান...হারটে চাপ পড়বে...আপনের আগেও দুইবার হারটঅ্যাটাক হইয়েছে...তিনবার হলি মানুষ মইরে যায়...।
—চোপ শালা...একদম চোপ...আর একটা কথা বললে ভুঁড়ি ফাটায় দিব...
—ভাইজান, আমি ঠিকমতো খাতিই পাইনে, ভুঁড়ি আসবে কোনতে।
—গার্ডগুলো সব মরছে কোথায়...সবগুলোর ভুঁড়ি ফাটায় দিব আজকে...হারামখোরের দল...
—ওরা কেউ আসবিনে। ঘুম পাড়ায় এয়েছি...।
এইবার ঘাবড়ে যায় সোলায়মান। তার ধারণা, শত্রুপক্ষের কেউ বদর আলীকে পাঠিয়েছে তাকে মেরে ফেলার জন্য।
—আ...আ...আসবে না মানে!!! কী...কী...কী করেছেন ওদের...
—ভাইজান আমাকে কি আপনে চিনতে পারিছেন?
ভয়ার্ত সোলায়মান উত্তর দেয়—‘না...না...না...’
—আমি বদর আলী, বাস চালাইতাম। ঢাকা টু খুলনা।
ঈগল পরিবহন। যশোর ব-১১-০১৯। মনে পড়িছে?
—তু...তু...তুমি কে?
—ভাইজান, আপনে ভয় পায়েন না। আপনের আগেও দুইবার হারটঅ্যাটাক হয়িছে। না চিনতি পারলি কয়ে দিচ্চি। যেই বাসটাতে আপনের হুকুমে আগুন দেওয়া হয়েছিল, আমি সেই বাসের ডিরাইভার। চিষ্টা করিছিলাম, বাইরাতি পারিনি...পুইড়ে মরিছি...তাতি অবশ্য দুক্কু হয় না। শুধু কষ্ট লাগে ইস্তিরি আর ছাওয়াল-মাইয়ে দুডোর জন্যি। বইনডারও বিয়ি দিতি হতো...কিরাম কইরে যে কী হবিনি...
ভাইজান কি ভয় পেয়েছেন? ভয় পায়েন না...আপনের আগেও দুইবার হারটঅ্যাটাক হইয়েছে। শুনিছি, তিনবার হলি মানুষ মইরে যায়...
কিন্তু ততক্ষণে তৃতীয় হার্ট অ্যাটাকটা হয়ে গেছে সোলায়মানের।
বদর আলী বুঝতে পারে না সে প্রতিশোধ নিল কি না। বহুদিন পর মুক্তির অনুভূতি নিয়ে সে উড়তে থাকে আকাশের দিকে।
ওপরে...আরও ওপরে...
আফিয়া আবিদা
ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা।
source - Prothom alo
0 comments:
Post a Comment