আবির যখন পুলিশ
আবির যখন পুলিশ
সবে এস,এস,সি পাশ করেছে আবির। অসচ্ছল পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা বাবা আর পারবেন না আবিরের লেখা-পড়ার খরচ যোগাতে। আর খরচ করেছেই বা কবে! মা অপরের বাড়িতে ঢেঁকিতে ধান ভেঙ্গে বা ময়লা কাপড় কেঁচে পরিস্কার করে যা রোজগার করেছে তার সিংহভাগই খরচ হয়েছে আবিরের লেখা-পড়ায়। এখন বয়স বেড়েছে আবিরের মায়ের কিন্তু কমেছে কোমরের জোর। ঢেঁকিতে ধান ভাঙ্গা বা কাপড় কাঁচা আর সম্ভব নয়। তাই সাফ জানিয়ে দিয়েছে আবিরের মা, তিনি আর পারবেন না আবিরের খরচ জোগাতে।
আবিরের চোখে নেমে আসে ঘন কালো অন্ধকার। তার সহপাঠিরা যখন কলেজে ভর্তি হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, আবির তখন তার সংসারের করুন দশা ভেবে ভেবে আড়ালে চোখের জল ফেলছে। সামান্য এসএসসি পাশ করে সে কি করে সংসারের হাল ধরবে সেটা ভেবেই ব্যাকুল হয়ে পড়ে। বাজারে গিয়ে শুনতে পায় পুলিশের চাকুরীর সার্কুলার দিয়েছে। যোগ্যতা এসএসসি পাশ হলেই কনস্টেবল পদে ভর্তির জন্য আবেদন করা যাবে। অনেক খুঁজে একটি সার্কুলার কপি সংগ্রহ করে সে। যোগ্যতা অনুযায়ী বয়স এখনও পূর্ণ হয়নি তবে কয়েকদিনের মধ্যেই বয়স হয়ে যাবে। হিসাব করে দেখে যখন ভর্তি হবে তখন তার বয়স যোগ্যতা অনুযায়ী পূর্ণ হয়ে মাত্র দুই দিন বেশী হবে। এই দুই দিনে বেশী না হয়ে কম হলে সে আবেদন করতে পারতো না।
সার্কুলার অনুযায়ী আবির সকল কাগজ-পত্র সংগ্রহ করে। কিন্তু ব্যাংক ড্রাফটের ১০০ টাকা তার কাছে নেই। রাতে মাকে জানায় তার ইচ্ছার কথা। মা প্রথমে বিশ্বাস করেনা যে কোন তদবির বা মাধ্যম ছাড়া পুলিশের চাকুরী হতে পারে। পরে আবির অনেক বুঝিয়ে বললে আল্লাহর উপর ভরসা করে তার মা অনুমতি দেয় এবং ব্যাংক ড্রাফটের ১০০ টাকা দিতে রাজী হয়। নির্ধারিত দিন সকালে আবির পুলিশ লাইনে গিয়ে হাজির হয় এবং প্রাথমিকভাবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোঠায় শারীরিক মাপে উত্তীর্ণ হয়।
লিখিত পরীক্ষায় সকল প্রার্থীদের মধ্যে সে দ্বিতীয় স্থান লাভ করে। এরপর মৌখিক পরীক্ষায় সে পরীক্ষা বোর্ডের নিকট তার বাবার মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের কথা এবং পারিবারিক দৈন্যতার কথা তুলে ধরে। পরীক্ষা বোর্ডের সদস্যরা তার প্রতি সন্তুষ্ট হন এবং নিয়োগের জন্য মেডিকেল পরীক্ষার অনুমোদন দেন। এরপর মেডিকেল পরীক্ষায় কিছু টেস্ট করতে টাকা লাগলে সে তার নিকট টাকা নেই বললে পুলিশ লাইনের কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করেন। পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হলে ডাক পড়ে আবিরের পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে। ৬ মাস অনেক কষ্টে প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করে যোগ দেয় নতুন কর্মস্থলে।
আজ চাকুরীর প্রথম বেতন হতে পেয়ে আবির খুব কেঁদেছে। এই টাকার জন্য তার মা কত কষ্ট করেছে! বাবা মুক্তিযুদ্ধে সম্মূখ যুদ্ধে আহত হয়েও দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন। দিনের পর দিন একবেলা খেয়ে বাকি দুইবেলা না খেয়ে উপোস রয়েছে। দৌড়ে পুলিশ লাইন ক্যান্টিনে গিয়ে মোবাইল ফোন দিয়ে পাশের বাড়ির চাচীর মোবাইলে ফোন দিয়ে মায়ের সাথে কথা বলে। “মা তোমাকে আর কষ্ট করতে হবেনা, এখন থেকে আমি প্রতি মাসে তোমাদের খরচের টাকা পাঠিয়ে দিবো”। মা শুনে খুশি হয়ে আশির্বাদ করে “বাবা আমাদের কথা ভাবিস না, তোমার শরীরের প্রতি আগে লক্ষ রাখো”। আবিরের দু’চোখ দিয়ে আনন্দাশ্রু বের হয়ে গড়িয়ে পড়ে। অন্য এক অনন্য অনুভুতির মা ছেলের কথোপকথন লিখে প্রকাশ করা যাবে না। এ কান্না আনন্দের, এ কান্না সুখের, এ কান্না আশাহত জীবনে সুখ স্বপ্ন দেখার।
Hafizur Rahman
Source: BP HELPLINE
0 comments:
Post a Comment